“মুসলিমদের কাছে নবীর সম্মান যেমন পবিত্র, ফ্রেঞ্চদের কাছে সেক্যুলার মূল্যবোধ, বাকস্বাধীনতাও তেমন পবিত্র। এটা মুসলিমদের বুঝা দরকার।”
১। কেন?
কেন এটা আমার বোঝা দরকার? ডাকাত তো প্রয়োজনের কারণেই চুরি করে। চোর দরকারে চুরি করে, শখের বসে করে না। অধিকাংশ ধর্ষক শরীরি কামনাবাসনার জন্য ধর্ষন করে। সবার নিজস্ব জাস্টিফিকেশন আছে। আমি তাদের জাস্টিফিকেশন পাত্তা দেই না। এখানে কেন ‘দিতে হবে’?
২। বাকস্বাধীনতা এতো পবিত্র হলে হলোকাস্ট নিয়ে অফিশিয়াল ন্যারেটিভের বাইরে প্রশ্ন করা ফ্রান্সে বেআইনী কেন? ‘আর্মেনিয়ান জেনোসাইড’ নিয়ে প্রশ্ন করা বেআইনি কেন? বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রে এতো এতো এক্সেপশান কেন? লিংক – https://tinyurl.com/y4c477br
৩। ফ্রান্সে ৬০ লক্ষের কাছাকাছি মুসলিম থাকে। মুসলিমদের কাছে নবী ﷺ- এর বিষয়টা কতো গুরুতর সেটা বোঝার চেষ্টা ফ্রান্স করেনি। আমাদের কেন ফ্রান্সের লোকজনের কাছে কী পবিত্র, সেটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে?
৪। ফ্রান্স যা করছে সেটা না বুঝে করছে, এটা মনে করার কারণ কী? শত শত বছর ফ্রান্স মুসলিম অধ্যুষিত ভূখন্ডে দখলদারি শাসন করে এসেছে। এর আগে ১৮৮৯ এ তারা মুসলিমদের আপত্তির মুখে নবী ﷺ-কে লেখা নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করেছে। মুসলিমদের কাছে নবী ﷺ-এর ব্যাপারটা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তারা সেটা জানে এবং বোঝে। তবু তারা মুসলিমদের অনুভূতিকে পাত্তা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের কী গরজ পড়েছে ওদের কাছে কী পবিত্র সেটা নিয়ে ভাবার? প্রথম তো ওরাই সেধে এসে অবমাননা করেছে। সেটা ২০০৬ এ হোক, ১৮৮৯ এ হোক, কিংবা ১৭৪১ এ হোক, কিংবা আরো আগে হোক।
৫। কোন কিছু বোঝা মানে সেটার সাথে একমত হওয়া না। সিরিয়াল কিলার কেন খুন করে, কাল্ট লিডাররা কেন মানুষকে ম্যানিপুলেট করে, সেটা আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু তার মানে এই না যে আমরা তাদের সাথে একমত হয়ে যাই। ঠিক আছে, বাকস্বাধীনতা নামের একটা সেলফ-কন্ট্রাডিকটরি ধারণাকে এরা পবিত্র মনে করে, বুঝলাম। তো? আল্লাহ যা পবিত্র করেছেন সেটাকে আক্রমন করাকে এই কাফেররা পবিত্র মনে করে। তাদের এই মনে করার দাম কী?
৬। বাকস্বাধীনতা তাদের কাছে পবিত্র – এটা যদি মেনেও নেই, তবু এটাকে সম্মান কেন করতে হবে? গালি দেয়া, অশ্লীল ইঙ্গিত করা, অশালীন ছবি আঁকা, তাচ্ছিল্য করা – এগুলোর বৈধতা আল্লাহ দেননি। কাফির-মুশরিকদের উপাস্যদের ব্যাপারেও এমন কিছু করার বৈধতা শরীয়াহতে দেয়া হয়নি। আগাগোঁড়া খারাপ, ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক একটা জিনিসকে কেন আমার সম্মান করতে হবে?
অনেকের কাছে গো-মূত্র পবিত্র। অনেকের কাছে মানুষ বলি দেয়া পূণ্যের কাজ। অনেকের কাছে ‘প্রেমভাজা’ খাওয়া পূণ্যের কাজ। এখন এগুলোর পেছনের মিথোলজি পড়ে, বুঝে, এগুলো সম্মান করা শিখতে হবে? গালি দেয়া, পর্নোগ্রাফিক ছবি আঁকা, মূত্র আর বীর্য খাওয়া সম্মান না করলে ‘সভ্য’ হওয়া যাবে না?
৭। ‘তুমি যদি তাদের সম্মান না করো তাহলে ওরা কেন তোমার অনুভূতি সম্মান করবে?’ আমার অনুভূতিকে সম্মান কে করছে? মুশরিকরা? যারা কোটি কোটি মুসলিমের নাগরিকত্ব বাতিল করার চেষ্টা করছে? গরু খাওয়ার কথা বলে রাস্তায় পিটিয়ে মারছে, ওরা?
সেক্যূলাররা? যারা বিশ্বজুড়ে আমার নবী ﷺ-কে আক্রমন করে যাচ্ছে? দশকের পর দশক ধরে? যারা তাদের আদর্শের আদলে আমার দ্বীনকে কাটছাট করতে চায়? যারা শত শত বছর ঔপনিবেশিক গণহত্যা, ধর্ষন, লুটপাটের পর এখন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, স্বাধীনতার নামে একই কাজ করছে? যারা বছরের পর বছর মুসলিম ভূখন্ডগুলোতে বোমাবাজি করছে? লুট করছে? যারা রুশদী, তসলিমা, ভিকস, আয়ান হিরশ আলি থেকে শুরু করে সব কালার এবং স্ট্রাইপসের জঘন্যতম ঘৃণাজীবিদের দশকের পর দশক পালছে? ওরা?
যায়োনিস্টরা? যারা বছরের বছর আমার ওপর দখলদারি আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে? বিশ্বের সবচেয়ে ওপেনএয়ার কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প বানিয়েছে?
ওরা তো আমার অনুভূতিকে বিন্দুমাত্র সম্মান করে না। রাজনৈতিক, সামরিক, কূটনৈতিক কারণে মাঝেমধ্যে নিজেদের ঘৃণা আড়াল করে কেবল। এরা সম্মানের ভাষা বোঝে না। এদের তথাকথিত কলমের স্বাধীনতার ভিত্তি হল অস্ত্র। এদের কলম বন্দুকের মুখে বেয়োনেটের মতো বাঁধা। আব্দুল্লাহ আনযরোভ রাহিমাহুল্লাহ এ বাস্তবতা বুঝেছেন।
৮। আচ্ছা ভালো কথা। ম্যাখোসহ অনেক ফ্রেঞ্চ রাজনীতিবিদ, লেখক, বুদ্ধিজীবি এবং মিডিয়ার মতে ফ্রেঞ্চ হবার অর্থ বাকস্বাধীনতার নামে যা কিছু স্যাক্রেড সেটাকে প্রোফেইন করার স্বাধীনতা। যা কিছু পবিত্র তার অবমাননা এবং কলুষিত করার স্বাধীনতা। এটা স্পষ্টত ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। তাহলে ফ্রেঞ্চ হবার অর্থ ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক একটা বিষয়ের স্বীকৃতি দেয়া? আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের বদলে রিপাবলিকের আনুগত্য করা? রিপাবলিক যতোটুক স্বীকৃতি দেবে অতোটুক ইসলাম মানা, বাকিটা অস্বীকার করা? এই রিপাবলিক কি তাহলে তাগুত না? মিথ্যা ইলাহ না, যাকে আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়েছে?
ইন ফ্যাক্ট, ফ্রান্সের ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে ভালোভাবে বোঝা গেলেও এ কথাটা আধুনিক সব রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না?
৯। তোমরা মুখে বলো ‘মুসলিমদের বুঝা দরকার’। কিন্তু তোমরা আসলে বোঝাও, মুসলিমদের ‘অ্যাসিমিলেইট’ করা দরকার। মানে পশ্চিমা কুফফারের বানানো সেক্যুলার ডকট্রিনকে জেনেবুঝে, মেনে নেয়া। মুসলিম পরিচয়কে পেছনে রেখে, ফ্রেঞ্চ, অ্যামেরিকান, ভারতীয় কিংবা বাংলাদেশী পরিচয়কে প্রাধান্য দেয়া। কুরআনকে পেছনে রেখে সংবিধানকে প্রাধান্য দেয়া। সুন্নাহকে বাদ দিয়ে সংস্কৃতিকে আকড়ে ধরা। আল্লাহর বদলে নেইশন স্টেইটকে ইলাহ হিসেবে নেয়া। ম্যাখো এটা খোলাখুলি বলে। তোমরা বলো না কেন?
১০। সাহাবাদের (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) বড় একটা অংশ ইসলামগ্রহণের আগে জীবনের বড় একটা অংশ মুশরিক হিসেবে কাটিয়েছিলেন। সাদ ইবনু মুয়ায রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ৩৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। ইসলাম গ্রহণ করেছেন ৩০ বছর বয়সে।
তোমরা বাঙ্গালরা পশ্চিমে স্টুডেন্ট ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে গিয়ে, অথবা সিটিযেনশিপ পেয়ে লাইসিতে (laïcité) কিংবা এনলাইটেনমেন্টকে যতো ভালোভাবে বুঝছো, সাহবারা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) শিরক এবং শিরকের কালচারকে তারচেয়ে অনেক ভালোভাবে বুঝতেন।
আতলামি পাঠচক্র করে, ইউটিউব ভিডিও দেখে, কিংবা অনুবাদ করা ‘মুক্তচিন্তা’ পড়ে তোমরা যা বুঝছো, সাহাবারা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) তারচেয়ে শতগুণ, হাজারগুণ বেশি সুক্ষভাবে, গভীরভাবে শিরক এবং শিরকের কালচারকে বুঝতেন।
তবু ঈমান আনার পর, তাওহিদ আনার পর তাঁরা শিরককে সম্মান করেননি। আতলামি করে মুশরিকদের সাথে অ্যাসিমিলেইট করার কথা বলেননি। তাঁরা বুঝেছিলেন তাওহিদ, আর ইমান হল সভ্যতা। যা কিছু এর বাইরে তা জাহিলিয়্যাহ। জাহিলিয়্যাহ বোঝার বয়ান দেয়ার বদলে তোমাদের ইমান এবং তাওহিদ বোঝার চেষ্টা করা দরকার।