১।
প্রেমিকার বিদিশার নিশারূপী চুল, নগ্ন নির্জন হাত সহ ইঞ্চি ইঞ্চি নিয়ে সম্ভবত বাংলা ভাষার কবিতা এবং সাহিত্যে ইনিয়ে বিনিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ফেমিনিস্টরা চাইলে নারীর অবজেক্টিফিকেশানের অনেক রূপ এখানে খুঁজে পেতে পারে। কিন্তু সন্তানের হাসি নিয়ে বাংলা ভাষায় গল্প-কবিতা কেমন লেখা হয়েছে? পড়তে চাচ্ছি না, স্ট্যাটিস্টিক্স নিয়ে আগ্রহী।
২।
বছর ছয়েক আগের কথা। আরব বসন্ত। মানুষের মুখে মুখে প্রশ্ন, মধ্যপ্রাচ্য কি কখনো আর আগের অবস্থায় ফিরে যাবে? আজকের কথা। পশ্চিমের অনেকেই প্রশ্ন করা শুরু করেছে – যে পশ্চিমকে আমরা চিনি তা আর কতোদিন টিকবে? প্রাচ্যে এখনো এ প্রশ্ন করা শুরু হয় নি কারণ ঐতিহাসিক ভাবে আমাদের অ্যানালিস্ট-পর্যবেক্ষকরা কপি-পেইস্ট চিন্তা এবং পশ্চিম নিয়ে মুগ্ধতায় ভুগেন।
৩।
ক্যামিল পা’লিয়ার বর্তমান সময়ের পশ্চিমের ট্রান্সজেন্ডার এজেন্ডা নিয়ে খুব সুন্দর একটা কথা বলেছেন। মহিলার প্রথম বই ছিল পশ্চিমা সভ্যতার শিল্পের ইতিহাস অবক্ষয়; স্পেসিফিকালি যৌন অবক্ষয় নিয়ে। সুতরাং এ বিষয়ে তার কথার ওজন আছে। পা’লিয়ার অ্যাসেসমেন্ট হল প্রত্যেক বড় বড় সভ্যতার মধ্যে একটা প্যাটার্ন দেখা যায়। সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে পুরুষত্বকে মহিমান্বিত করা হয়। কিন্তু অবক্ষয়ের পর্যায়ে, অবক্ষয়ের শেষ পর্যায়ে পৌছালে পুরুষত্বের বদলে নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য সমাজ, শিল্পের মধ্য দিয়ে বেশি প্রকাশ পায়। রোমান সভ্যতার শুরুর দিকের ভাস্কর্যগুলো যুদ্ধংদেহী অ্যালফা মেইল টাইপ। শেষের দিকে গিয়ে আঁকাবাঁকা ভাবে দাঁড়ানো ডেইভিডদের জয়জয়কার। এই প্যাটার্নটা বিভিন্ন সভ্যতার ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তি করে। অবক্ষয়ের পর্যায়ে এসে সভ্যতাগুলোর মধ্যে পুরুষত্ব, ট্র্যাডিশানাল ফ্যামিলি, ইত্যাদির বদলে যৌন বিকৃতিকে মহিমান্বিত করা হয়। তারা এটাকেই সভ্যতার মাপকাঠি মনে করে করে। পশ্চিমের বর্তমান অবস্থার ক্ষেত্রে কথা খাপে খাপে মিলে যায়।
৪।
পশ্চিমা সভ্যতা সিরিয়াস ধরণের একটা এক্সিসটেনশিয়াল ক্রাইসিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যে জুডিও-ক্রিশ্চিয়ান নৈতিকতার উপর পশ্চিমা ওঔপনিবেশিক সভ্যতা গড়ে ওঠেছে, সেটা ক্ষয় হতে হতে এখন নিঃশেষিত। এক দিকে সমস্ত মিডিয়া এবং বৈশ্বিক অথোরিটি গুলো র্যাডিকাল লিবারেলিযম প্রচার করছে। অন্যদিকে প্রতিক্রিয়া হিসেবে জাতীয়তাবাদী এবং বিশেষভাবে শ্বেতাঙ্গ পরিচয়কেন্দ্রিক আদর্শের উত্থান ঘটছে। এ দুই আদর্শের লড়াইয়ে পরের দলের বিজয় হবার কথা। আইডেন্টিটি পলিটিক্স শক্তিশালি মোটিভেটর। অন্যদিকে খালি পেটে লিবারেলিযম জাতীয় বায়বীয় আদর্শ জমে না। একবার লিবারেল লেফটের উপর বিজয় নিশ্চিত হলে শ্বেত সন্ত্রাস মুসলিমদের দিকে তাদের মনযোগ দেবে। ইনকুইযিশান। পশ্চিমা মুসলিমরা এই দু’পক্ষের লড়াইয়ে লিবারেলদের পক্ষ নিয়েছে। এটা কোন কাজে তো আসবেই না, হয়তো ব্যাকল্যাশকে আরো তীব্র করবে।
৫।
লিবারেলরা ব্যাপকভাবে ধর্মের সমালোচনা করে। অথচ তারা নিজেরাই ডগম্যাটিক। নিজেদের কিছু দৃষ্টিভঙ্গিকে সবার উপর চাপিয়ে দিতে চায়। যা তাদের কাছে ভালো সারা দুনিয়ার মানুষের সেটাকে ভালো মনে করতে হবে। বাংলাদেশের শাহবাগের মধ্যেও এ বৈশিষ্ট্য আছে। তারা সহনশীলতা, মুক্তমন এসব হাবিজাবি ক্রমাগত বলে যায়, অথচ দাবি করে যেন সবাই তাদের নৈতিকতার মানদণ্ড মেনে চলে। ইসলাম কেন মানবিক, ইসলাম কেন আধুনিক, ইসলাম কতোটুক নারী অধিকার দেয়, ইসলাম কতোটুক মানবাধিকার দেয় সেটা এখন ওদের বেঁধে দেওয়া মাপকাঠিতে ওদের কাছে ব্যাখ্যা করতে হবে! যতোটুক মানোত্তীর্ন ততোটুক মানা যাবে বাকিটা বাদ দিতে হবে। এই হল ওদের দাবি। কেউ সরাসরি বলে, কেউ ঘুরিয়ে।
৬।
এখনো কিছু মানুষ বলে যাচ্ছে মুসলিমদের উত্তরনের পথ হল জ্ঞানে-বিজ্ঞানে উন্নতি করে পশ্চিমের মোকাবেলা করা। আরেক দল যা বলছে তার মূলত ভাবার্থ হল, কীভাবে পশ্চিমের সাথে ডায়ালগ করা যায়, তাদের সাথে সহাবস্থান করা যায় সে ভাষাটা, সে বয়ানটা ঠিক করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে ইন্টেলেকচুয়ালি তাদের সাথে ফাইট দিতে হবে। এভাবেই উম্মাহর উত্তরণ ঘটবে। আরেকদল আছে পশ্চিমের অনুকরনের মাধ্যমে উত্তরনের মডেল, যা কিছু পাওয়া যায় সবকিছু “ইসলামাইয” করে সেটাকে উন্নতি বলে চালিয়ে দেয়ার মডেল নিয়ে।
মানুষের মূর্খতার আসলে কোন সীমাপরিসীমা নাই।
#বিক্ষিপ্ত