নিচের অংশটি নেয়া হয়েছে ইলমহাউস পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত, লস্ট মডেস্টি রচিত 'আকাশের ওপারে আকাশ' বইয়ের অগ্ন্যুৎসব অধ্যায় থেকে:

ক্ষয় হতে হতে অ্যামেরিকার অধিকাংশ পরিবার আজ ফাঁপা খোলসে পরিণত হয়েছে।অ্যামেরিকায় জন্ম হওয়া মোট শিশুর প্রায় ৪১%-ই হলো বিয়ে বহির্ভূত প্রেমের ফসল। অর্থাৎ, আজ অর্ধেকের কাছাকাছি অ্যামেরিকান শিশু আক্ষরিক অর্থেই জারজ। যেসব ক্ষেত্রে বিয়ের পর বাচ্চা হচ্ছে, সেই বিয়েগুলোরও বড় একটা অংশ টিকছে না। শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে প্রতি ৪ জনে ১ জনের ঘরে বাবা নেই। আফ্রিকান অ্যামেরিকানদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি, ১০০ জন শিশুর মধ্যে ৬৫ জনের ঘরেই বাবা নেই।

এই শিশুরা বড় হচ্ছে ভাঙা পরিবারে, বাবার ছায়া ছাড়া। সন্তানদের সঠিক মানসিক এবং আত্মিক গঠনের জন্য বাবা এবং মা, দুজনের উপস্থিতিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাবাকে ছাড়া বেড়ে ওঠা প্রজন্মের মধ্যে দেখা যাচ্ছে নানা ধরনের অস্থিরতা আর অসুখ। বিচ্ছিন্ন পরিবারের সন্তানদের অপরাধে জড়িত হবার প্রবণতা বেশি থাকে। এরা পড়াশোনায় খারাপ করে, স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। দরিদ্রতা, বৈষ্যমের মধ্যে বড় হয়। গবেষণার পর গবেষণা জানালো অল্প বয়স্ক খুনি, সিরিয়াল কিলার, ‘ভালো লাগছে না, যাই ক্লাসরুমে, শপিং মলে কিংবা জনসমাবেশে গুলি করে পাখির মতো মানুষ মেরে আসি’–মানসিকতার ম্যাস কিলার, মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী, ধর্ষক, মাস্তান, গ্যাং মেম্বার[1], বাসায় বউ পেটানো, বাচ্চাদের মারধর করা, বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় ভোগা মানুষদের মধ্যে একটা বৈশিষ্ট্য কমন–তাদের ঘরে বাবা নেই, তাদের বাবা মায়ের বিচ্ছেদ হয়েছে। শুধু তাই না, লিভ টুগেদার করা যুগলদের বাচ্চাদের ৪২% এর মধ্যে বন্ধুদের ধরে মারপিট করার প্রবণতা দেখা যায়, যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এদের কারাগারে যাবার সম্ভাবনাও স্বাভাবিক পরিবারের বাচ্চাদের তুলনায় ১২ গুণ বেশি![2]

একটা সভ্যতাকে ধ্বংস করে দেবার জন্য এমন বাবা-মা ছাড়া, বিবাহ বহির্ভূতভাবে জন্ম নেওয়া, স্থায়ী পরিবার ছাড়া বেড়ে ওঠা একটা জেনারেশনই যথেষ্ট। বেগতিক অবস্থা দেখে বিবাহ বহির্ভূত যৌনতাকে পূজা করা পশ্চিমারাই এখন বলতে শুরু করেছে শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে আদর্শ ব্যবস্থা হলো বিয়ের পবিত্র বন্ধনে গড়ে ওঠা পরিবার।

সস্তা প্রেম আর যৌনতাকেন্দ্রিক চিন্তাধারা সমাজেও অস্থিরতা তৈরি করে। জন্ম দেয় নানা সামাজিক অসুখের। পারিবারিক বন্ধনের মতো পশ্চিমে সমাজ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। ওদের তরুণ-তরুণীরা ক্ষুব্ধ, একা। ওরা বিভ্রান্তিতে ভুগছে আত্মপরিচয়, নিজের দেহ, পৃথিবীতে নিজের অবস্থান ও ভূমিকা–সবকিছু নিয়েই। নারীর দেহে আটকা পড়া পুরুষ, পুরুষের দেহে আটকা পড়া নারী, সাদার দেহে আটকা পড়া কালো, মানুষের দেহে আটকা পড়া পশু–এমন হাস্যকর সব বিভ্রান্তিতে দিন পার করছে ওরা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দারিদ্র্য, অস্থিরতা, সহিংসতা। যৌনরোগ, গর্ভপাত, বিচ্ছেদ, মাদকাসক্তি, পর্ন আসক্তি, খুনোখুনি, সহিংসতা আগের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ছোটবেলায় কোলেপিঠে করে মানুষ করা বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। করোনার সময় অ্যামেরিকাতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে বৃদ্ধাশ্রমে।[3] অথবা বৃদ্ধ বাবা-মা কোনোমতে একা ফ্ল্যাটে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন। ঘরের কোণে পড়ে থাকছে তাদের বিস্মৃত জীবনের বিস্মৃত লাশ। কেউ জানছে না, খোঁজও নিচ্ছে না। পচেগলে গন্ধ বের হবার পর প্রতিবেশীদের টেলিফোনে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করছে। এভাবেই পশ্চিমা সমাজ তার প্রবীণ সদস্যদের সাথে আচরণ করে। এই বুঝি আধুনিকতা?

পতনোন্মুখ সভ্যতায় যেসব বৈশিষ্ট্য থাকে, দেখা যাচ্ছে তার সবক’টিই। স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ মাত্রায় হতাশা আর বিষণ্ণতায় ভুগছে তারা। মেয়েদের মধ্যে এ সংখ্যা অনেক বেশি। হতাশার অনিবার্য পরিণতি সুইসাইডকেও আপন করে নিচ্ছে তারা। আত্মহত্যার হার তরুণ-তরুণীদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। প্রতি ৫ জনে ১ জন আত্মহত্যা করার কথা ভাবছে। ২০০৭ সালের তুলনায় সুইসাইড বেড়ে গিয়েছে প্রায় ৬০%। অ্যামেরিকার টিনেজারদের মৃত্যুর দুই নম্বর কারণই হচ্ছে সুইসাইড![4]

স্বপ্নের দেশ কানাডার অবস্থাও একই রকম। প্রতি ৩ জন কানাডিয়ানের ১ জন ভয়াবহ মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন। কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা ভয়াবহ। ছোট্ট বয়সটাতেই হতাশা, অবসাদ, ক্লেদ জাঁকিয়ে বসেছে এমন কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। প্রতি ৫ জনে একজন মনোযাতনায় ভুগছে। এদের সামনে লম্বা একটা সময় পড়ে আছে, জীবন শুরুই হয়নি কিন্তু এরই মধ্যে তাদের পৃথিবী এতোটাই সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছে যে অনেকেই আত্মহত্যা করে পালিয়ে বাঁচতে চাইছে। এই বয়সের কানাডিয়ানদের মৃত্যুবরণের দ্বিতীয় শীর্ষ কারণ হলো আত্মহত্যা।

এই বিষণ্ণতা আর হতাশার প্রভাব পড়ছে সমাজে। সমাজের তরুণদের বড় একটা অংশ যদি বিষাদে মগ্ন থাকে, যদি স্বেচ্ছায় ডুব দেয় মাদক আর সহিংসতার জগতে, যদি জীবনকে তাদের কাছে অর্থহীন, শূন্য আর স্রেফ সাময়িক সুখের খোঁজ করার মাধ্যম মনে হয়–তাহলে অবধারিতভাবেই ঐ সমাজ খারাপ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে। সমাজের সংহতি নষ্ট হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেবে–এটুকু বুঝতে আসলে বিজ্ঞানী হতে হয় না।

ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. জন ক্লিনটন সতর্ক সঙ্কেত জানিয়ে বলেছেন, তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, আমাদের সমাজ এক মহা সঙ্কটের ভেতর পড়েছে![5]

পশ্চিমের তরুণ সমাজকে যে বৈশিষ্ট্যগুলো গ্রাস করে নিচ্ছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল–অপরিপক্কতা (immaturity), আত্মকেন্দ্রিকতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, ঔদ্ধত্য, অস্থিরতা এবং আত্মমুগ্ধতা। আর এই অসুখগুলো দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের মাঝেও।


[1] বিশেষজ্ঞরা বলছেন- বাবার অভাব পূরণ করার জন্য, নিজের পরিচয়, স্বীকৃতি প্রটেকশনের জন্য শিশু কিশোররা গ্যাং কালচারে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।

[2] The Fury of the Fatherless, firstthings.com, December 2020-

tinyurl.com/yrunzhwn 

Americans must finally get a grip on the sexual revolution’s excesses, thehill.com - tinyurl.com/4rxty8wm  

Married Parenthood Remains the Best Path to a Stable Family,Institute for Family Studies, March 8, 2017- tinyurl.com/3av4chna

পরকীয়া ও শিশুদের মানসিক চাপ, ntvbd.com,  জানুয়ারি ২৫, ২০১৭-tinyurl.com/ms3p2x28

Consequences of the Sexual Revolution -tinyurl.com/mr3bsupb

Family status of delinquents in juvenile correctional facilities in Wisconsin, Division of Youth Services (১৯৯৪) - tinyurl.com/yuwjkhb9

[3] Nearly One-Third of U.S. Coronavirus Deaths Are Linked to Nursing Homes, The New York Times, Updated June 1, 2021

[4] More young people are dying by suicide, and experts aren't sure why, USA TODAY, September 11,2020-tinyurl.com/akprw45x  

Suicide rate highest among teens and young adults, ULCA health, March 15, 2022 -tinyurl.com/2p8kvftb  

Suicide Replaces Homicide as Second-Leading Cause of Death Among U.S. Teenagers, www.prb.org,June 9, 2016 -tinyurl.com/y3sjrvpz  

Why are American teens the most depressed they’ve ever been? globaltimes.cn,Apr 15, 2022- tinyurl.com/n6c8ry7m

Depression Is on the Rise in the U.S., Especially Among Young Teens, publichealth.columbia.edu,Oct. 30 2017- tinyurl.com/4hdr6yw8 

[5]  Young Minds: Stress, anxiety plaguing Canadian youth, globalnews.ca, May 6, 2013- tinyurl.com/ycps7wur

Why more Canadian millennials than ever are at ‘high risk’ of mental health issues, globalnews.ca, May 2, 2017- tinyurl.com/ya6uc68p

One-third of Canadians at ‘high risk’ for mental health concerns: poll, globalnews.ca, April 29, 2015-   tinyurl.com/yazjssqw