অভিশপ্ত আর বিতাড়িত হওয়ার পর ইবলিসের ধ্যানজ্ঞান হয়ে দাঁড়ায় মানুষকে সীরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত করা। যত বেশি সম্ভব বনী আদমকে নিজের সাথে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করে হিংসা আর বিদ্বেষের আগুনে নিয়ত জ্বলতে থাকা ইবলিস।
قَالَ أَرَأَيْتَكَ هَـٰذَا الَّذِي كَرَّمْتَ عَلَيَّ لَئِنْ أَخَّرْتَنِ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَأَحْتَنِكَنَّ ذُرِّيَّتَهُ إِلَّا قَلِيلً
সে (ইবলিস) বলল, ‘দেখুন, এ ব্যক্তি, যাকে আপনি আমার ওপর সম্মান দিয়েছেন, যদি আপনি আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত সময় দেন, তবে অতি সামান্য-সংখ্যক ছাড়া তার বংশধরদের অবশ্যই পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব।’ [তরজমা, সূরা বনী ইসরাইল, ৬২]
মানুষের মধ্যে ইবলিসের কিছু অনুসারী আছে, যারা হুবহু একই কাজ করে।
ওদের যৌনাকাঙ্ক্ষা বিকৃত। তাই মুসলিম যুবক-যুবতীদের যখন পবিত্রতা বজায় রাখতে দেখে, তখন ওরা সহ্য করতে পারে না ওরা।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আমাদের এ ধরনের মানুষের কথা জানিয়েছেন। যেমন লূত আলাইহিস সালাম ও তাঁর অনুসারীদের তাঁদের সম্প্রদায়ের লোকেরা বলেছিল,
أَخْرِجُوهُم مِّن قَرْيَتِكُمْ ۖ إِنَّهُمْ أُنَاسٌ يَتَطَهَّرُونَ
‘তাদের তোমরা তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। নিশ্চয় তারা এমন লোক, যারা অতি পবিত্র হতে চায়।’ [তরজমা, সূরা আল আ’রাফ, ৮২]
এধরণের মানুষ আজও আছে। শয়তানের এই অনুসারীরা চায় অন্যেরাও তাদের মতো অধঃপতিত হোক। অপবিত্র হোক। মানুষকে যিনা, ব্যভিচার আর যৌন বিকৃতির দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য ওরা হাজির হয় গান, সিনেমা আর পর্নোগ্রাফির সম্ভার নিয়ে। হরেক রকম অশ্লীলতার পসরা সাজিয়ে, ফেরি করে বেড়ায় নিরন্তর। যাতে যুবক-যুবতীদের কামনা জেগে ওঠে, কুপ্রবৃত্তি শক্তিশালী হয় এবং তাঁরা সীমালঙ্ঘন করে।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَيُرِيدُ الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الشَّهَوَاتِ أَن تَمِيلُوا مَيْلًا عَظِيمًا
…আর যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যে, তোমরা প্রবলভাবে (সত্য পথ থেকে) বিচ্যুত হও। [তরজমা, সূরা আন-নিসা, ২৭]
ইবলিসের মতোই ওরা নিজেরা বিচ্যুত এবং অন্যদেরও বিচ্যুত করতে চায়। ওরা নিজেরা নষ্ট, অন্যকেও নষ্ট করতে চায়। ওরা মানসিকভাবে অস্থির, অসুস্থ, ভারসাম্যহীন। তাই ঈমানদারের অন্তরের প্রশান্তি আর চোখের শীতলতা ওরা সহ্য করতে পারে না।
মৃত্যুর পর কী আছে, কী হবে—এ নিয়ে ওরা দুশ্চিন্তায় ভোগে।
যদি দুনিয়ার এ জীবনটার ওপারে কিছু না-ই থাকে, তাহলে বেঁচে থাকার অর্থ কি শুধু ঘুম, খাওয়া, যৌনতা, প্রাকৃতিক কর্ম সারা আর তারপর মরে যাওয়া?
চিন্তাগুলো ওদের অন্তরের অন্ধকারকে আরও গাঢ় করে।
আমাদের আখিরাতের জন্য কাজ করতে দেখলে ওদের রাগ বেড়ে যায়। ওদের কুঁড়ে-কুঁড়ে খায় অন্ধ ক্রোধ।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ كَمَا كَفَرُوا فَتَكُونُونَ سَوَاءً
তারা চায় যে, তারা নিজেরা যেমন কুফরী করেছে, তোমরাও তেমনি কুফরী করো, যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও। [তরজমা, সূরা আন-নিসা, ৮৯]
ভেতরে ভেতরে ওরা জানে, তুমি সত্যের অনুসারী আর ওরা মিথ্যের। কিন্তু তবু ওদের অনুশোচনা নেই। ওরা তাওবাহ করতে চায় না। আত্মসমর্পণ করতে চায় না আসমান-যমীনের মালিকের কাছে; বরং ওরা তোমাকেও নামিয়ে আনতে চায় ওদের কাতারে। যেন তুমিও ওদের মতো কলুষিত হও। যেন ওদের আর নিজেদের নিকৃষ্ট মনে না হয়।
ইবলিস জানে সে জাহান্নামে যাবে। কিন্তু সে জাহান্নামে একা থাকতে চায় না।
ওরাও চায় না।
ওরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে।
তাই ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং নিজের দৃষ্টি অবনত করো। গ্রহণ করো ঈমান ও হিদায়াতের শ্রেষ্ঠত্ব।
وَلَا يَسْتَخِفَّنَّكَ الَّذِينَ لَا يُوقِنُونَ
…আর যারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে না তারা যেন তোমাকে অস্থির করতে না পারে। [তরজমা, সূরা আর-রূম, ৬০]
ড. ইয়াদ আল-কুনাইবী হাফিযাহুল্লাহর অনুদিত লেখার সংকলন
আয়নাঘর থেকে