ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ: আইন, পাঠ্যপুস্তক এবং যৌন শিক্ষা
বাংলাদেশের ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ তথা এলজিবিটি এজেন্ডার প্রতিষ্ঠায় এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুতর অবনতি দেখা গেছে আইন এবং শিক্ষার দিকে। তাই এ দুটি বিষয়ের দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন আলাদাভাবে।
আইন
বাংলাদেশে রীতিমতো আইন প্রনয়ন করে ট্রান্সজেন্ডারবাদ তথা এলজিবিটি এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়া চলছে। ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সাম্প্রতিক দেশকাল পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ট্র্যান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় আইন দ্রুত পাশ হবে’ শিরোনামের এক খবরে বলা হয়েছে,
“সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আমরা ট্র্যান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় আইনের খসড়া প্রণয়ন করতে পেরে খুশি। এই কমিউনিটির সদস্যদের সমাজের মূলস্রোতধারায় আনাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে...”[1]
অর্থাৎ আইনের মাধ্যমে এধরণের বিকৃতিতে মূলস্রোতে মিশিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। আর তা করা হচ্ছে অধিকারের নামে। ৫ই ডিসেম্বর ২০২৩-এ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত ‘সম্পত্তিতে অধিকার পাবেন ট্রান্সজেন্ডার সন্তানরা’, শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
“ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০২৩ ’শীর্ষক আইন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই পাস করা হবে বলে জানান সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম শেখ। তিনি বলেন, নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনে পাস করার জন্য আমরা কাজ করছি। এক বছরের মধ্যে আইনটি করার জন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সরকার চায় এই বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায় হোক। তাই এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় ইতিমধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নেতৃত্বে এর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দ্বারা গঠিত একটি কমিটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে।”[2]
যার অর্থ হল, যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে এ আইনের খসড়া হয়েছে এবং তা পাস করানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ প্রক্রিয়ার পেছনে মূল চালিকা শক্তি হিসাবে আছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক, বিভিন্ন এনজিও এবং মার্কিন সরকার। এ বিষয়টি উঠে এসেছে মার্কিন রাজনীতিবিদদের বক্তব্যেই।
ফ্লোরিডা রাজ্যের রিপাবলিকান গর্ভনর রন ডিস্যান্টিস ২০২৪ এর জানুয়ারিতে মার্কিন সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন ইউএসএইডের মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ প্রচারে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করছে। এটা অ্যামেরিকান জনগণের ট্যাক্সের টাকার অপচয়। তবে সিএনএন জানিয়েছে এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ২০১৮ সালে।[3]
ইউএসএইডের যে প্রতিবেদনগুলোর বরাতে রন ডিস্যান্টিস অভিযোগ করেছেন, সেখানে ঠিক কী বলা হয়েছে তা দেখা যাক। বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এলজিবিটি এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন সিভিল সোসাইটি অর্গানাইযেইশান বা নাগরিক সংগঠনকে সহায়তা দিচ্ছে তারা। আর এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০২১ সালে আদমশুমারীতে প্রথমবারের মতো ‘তৃতীয় লিঙ্গ’-এর জন্য আলাদা ঘর যুক্ত করা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে,
লিঙ্গ বৈচিত্র্যপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রকল্পে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে একটি ট্র্যান্সজেন্ডার আইনের খসড়া জমা দিয়েছে, যাতে যৌন বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা এবং অন্যান্য অধিকার বৃদ্ধি পায়।[4]
অর্থাৎ ইউএসএইডের অর্থায়নে ‘নাগরিক সংগঠন’গুলো বাংলাদেশ ট্র্যান্সজেন্ডার আইনের খসড়া তৈরি করেছে। সেই নাগরিক সংগঠন করা?
এই প্রশ্নের উত্তর আছে ইউএসএইডের আরেক প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের প্রচারের সেই প্রকল্পের টাকা দেয়া হয়েছে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটিকে।
এর আগে ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত-ও ইউএসএইডের অর্থায়নে এলজিবিটি এজেন্ডা প্রতিষ্ঠার আরেকটি প্রকল্পে কাজ করেছে বন্ধু। শুধু তাই না ইউএসএইডের অর্থায়নে ‘সমতা’ নামে আরেকটি ৫ বছর ব্যাপী প্রকল্প চলছে বাংলাদেশে। এখানেও আছে বন্ধু। এই প্রকল্পের অধীনে কাজ চলছে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগীয় শহরে।[5]
ট্র্যান্সজেন্ডার আইনের পেছনে বন্ধু-র ভূমিকার কথা উঠে এসেছে তাদের নিজস্ব প্রতিবেদনেও। বন্ধু-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
‘সমাসেবা অধিদফতর এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বন্ধু-র সাথে কোলাবরেশন করেছে, এবং ট্র্যান্সজেন্ডার সুরক্ষা আইন বাংলাদেশের খসড়া প্রস্তুত করেছে।’[6]
এই সহযোগিতা ঠিক কেমন তার বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে, বন্ধু-র আরেকটি প্রতিবেদনে। এ প্রতিষ্ঠানের পচিশ বছর পূর্তী উপলক্ষে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্র্যান্সজেন্ডার সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করেছে বন্ধু-ই। তারপর তারা সেটা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে।
২০২১-এ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাথে প্রাথমিক আলোচনা আয়োজন করা হয়, বন্ধু ট্রান্সজেন্ডার আইনের একটি খসড়া তৈরি করে এবং পর্যালোচনার জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে জমা দেয়।[7]
এই খসড়াটিই পরে গৃহীত হয়েছে। টাইমলাইনটা লক্ষ্য করুন।
বন্ধু এবং তাদের অ্যামেরিকান মনিবরা বলছে ২০২১ সালে তারা খসড়া বানিয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে ২০২২ এর মার্চ মাসে সংবাদমাধ্যমে আমরা দেখছি, “সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আমরা ট্র্যান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় আইনের খসড়া প্রণয়ন করতে পেরে খুশি...”[8]
তারপর আবার ২০২৩ এর সেপ্টেম্বরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আয়োজিত কর্মশালাতে বলা হচ্ছে ‘ট্র্যান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় আইন দ্রুত পাশ হবে’।[9]
সবশেষে ২০২৩ এর ডিসেম্বরে বলা হচ্ছে, ‘ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০২৩ শীর্ষক আইন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই পাস করা হবে’, ‘এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় ইতিমধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নেতৃত্বে এর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দ্বারা গঠিত একটি কমিটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে’।[10]
অর্থাৎ এজেন্ডা আর পয়সা দিয়েছে অ্যামেরিকা ও এডিবি, তাদের ফরমায়েশ অনুযায়ী আইনের খসড়া বানিয়েছে বন্ধু, আর সেটাই গৃহীত হয়ে গেছে!
উপরের তথ্যগুলো ও স্বীকারোক্তি থেকে অকাট্যভাবে প্রমান হয় যে বাংলাদেশে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে অ্যামেরিকা তথা পশ্চিমা বিশ্বের নির্দেশনায়, এবং এটি করা হচ্ছে এলজিবিটি এজেন্ডার অংশ হিসেবে।
পাঠ্যপুস্তকে ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদ:
সামাজিকভাবে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদকে বৈধতা দেওয়ার জন্য চলমান নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ ও বিকৃত যৌনতার স্বাভাবিকীকরণ। এখানে কাজ চলছে দুইটি ধারায়। একটি হল সরাসরি ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের শিক্ষা, অন্যটি হল যৌন শিক্ষার নামে অবাধ, বিকৃত যৌনতা এবং এলজিবিটি মতবাদের স্বাভাবিকীকরণ।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড NCTB-এর ২০২৩ সালের সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে ৫১-৫৬ পৃষ্ঠায় ‘শরীফার গল্প’ শিরোনামের লেখায় সরাসরি ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের দীক্ষা দেওয়া হয়েছে। ৫১ পৃষ্ঠায় দেয়া গল্পে মূল চরিত্র শরীফা বলছে,
“আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে...
এ গল্পে শরীফা নিজেই স্বীকার করছে, ছোটবেলায় সে ছেলে ছিল। নাম ছিল শরীফ আহমেদ ।যখন আস্তে আস্তে বড় হলো তখন সেই শরীফ আহমেদই নিজেকে মেয়ে ভাবতে শুরু করলো এবং মেয়েদের মতো আচরণ করতে লাগলো। আর এটাই তার ভালো লাগে। ৫২ পৃষ্ঠায় মূল চরিত্র শরীফাকে একজন বলছে,
“…আমরা নারী বা পুরুষ নই। আমরা হলাম ট্র্যান্সজেন্ডার।”
একই বইয়ের ৫৩ পৃষ্ঠায় নতুন প্রশ্ন অনুচ্ছেদে পাঁচজন শিক্ষার্থীর কথোপকথনের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এই কথোপকথনে এক শিক্ষার্থী বলছে তার মা তাকে শিখিয়েছে,
‘...ছোটদের কোনো ছেলে-মেয়ে হয় না। বড় হতে হতে তারা ছেলে বা মেয়ে হয়ে ওঠে।’
৫৫ এবং ৫৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,
‘আমরা যে মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখেই কাউকে ছেলে বা মেয়ে বলছি, সেটা হয়তো সবার ক্ষেত্রে সত্যি নয়।’
‘...এখন বুঝতে পারছি, ছেলে-মেয়েদের চেহারা, আচরণ, কাজ বা অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের কোনো স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম নেই।’
‘...একটি শিশু যখন জন্ম নেয় তখন তার শরীর দেখে আমরা ঠিক করি সে নারী নাকি পুরুষ। এটি হলো তার জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়। জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে একজন মানুষের কাছে সমাজ যে আচরণ প্রত্যাশা করে তাকে আমরা ‘জেন্ডার’ বা ‘সামাজিক লিঙ্গ’ বলি। জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে তার জেন্ডার ভূমিকা না মিললে প্রথাগত ধারণায় বিশ্বাসী মানুষেরা তাকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।’[11]
কথাগুলো সরাসরি পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আমদানী করা ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ এবং জেন্ডার আইডেন্টিটি মতবাদের বক্তব্য। আত্মপরিচয় এবং যৌনতা নিয়ে বিকৃতিকে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করে নিতে শেখানো হচ্ছে আমাদের শিশুদের।
বইয়ের এ অংশ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদের মুখে ২০২৪ সালের সংস্করণে ট্র্যান্সজেন্ডার শব্দটা বাদ দেয়া হয়, কিন্তু মূল বক্তব্য একই থাকে। ২০২৪ সালের বইয়ে শরীফার গল্প এসেছে ৩৯-৪৪ পৃষ্ঠায়। ৪০ পৃষ্ঠায় এখনো বলা হচ্ছে-
“আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে..."
সেই একই ছোটবেলায় ছেলে, তারপর নিজেকে মেয়ে ভাবা, শরীফ থেকে শরীফা হওয়ার গল্প শোনানো হয়েছে নতুন বইয়েও।
৪২ এবং ৪৪ পৃষ্ঠায় বাচ্চাদের উদ্দেশ্য বলা হয়েছে,
‘আমরা যে মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখেই কাউকে ছেলে বা মেয়ে বলছি, সেটা হয়তো সবার ক্ষেত্রে সত্যি নয়।’[12]
অর্থাৎ, একজন মানুষ পুরুষের শরীর নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও সে যদি কোনো এক বয়সে নিজেকে নারী দাবী করে তাহলে সে নারী। আবার নারী দেহ নিয়ে জন্মগ্রহণ করা কেউ যদি নিজেকে পুরুষ দাবী করে তাহলে সে পুরুষ। যতোক্ষণ না অন্যের কোনো ক্ষতি হচ্ছে ততোক্ষণ যা খুশি তা-ই করা যায়। চাইলেই লিঙ্গ পরিবর্তন করা যায়। আর যারা এটা মেনে নেবে না তারা সেকেলে, পশ্চাৎপদ।
পাঠ্যবইয়ে এই মতবাদ আসলো কিভাবে?
পাঠ্যবইয়ে ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদ ঢোকানোর পেছনে নিজেদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি তাদের ২০২১ সালের বাৎসরিক প্রতিবেদনে লিখেছে,
“পলিসি অ্যাডভোকেসি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বন্ধু তাই একটি নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে এনসিটিবির সাথে সংলাপ শুরু করেছে...”[13]
সেই নির্দিষ্ট এজেন্ডা কী? উত্তর একটু পরেই দেয়া হয়েছে,
"...এভাবেই অবশেষে কম্প্রিহেনসিভ যৌন শিক্ষা জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে...এটি সরাসরি বন্ধু-র দীর্ঘমেয়াদী অ্যাডভোকেসির ফল। বন্ধু বিশ্বাস করে হিজড়া এবং ট্র্য।ন্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের অধিকার ও প্রয়োজনসংক্রান্ত সমস্যাগুলো শীঘ্রই শিক্ষাক্রমে প্রতিফলিত হবে, এই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে চলমান..."[14]
আসলেই খুব দ্রুত তাদের এই ‘বিশ্বাস’ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ২০২২ সালের বাৎসরিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপারসন এবং এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টরের লেখায় বলা হচ্ছে,
"জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সাথে দৃঢ় লবিয়িং এবং অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে, ট্র্যান্সজেন্ডার, হিজড়া এবং লিঙ্গ রূপান্তরমূলক দৃষ্টিভঙ্গি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটি বিস্তারিত (কম্প্রিহেনসিভ) অংশ সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।"[15]
একই প্রতিবেদনের ৯ নং পৃষ্ঠায় বলা হচ্ছে, এই আলোচনাগুলো এসেছে ‘ক্লাস ৭ এর সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যবইয়ে’।[16]
অর্থাৎ পাঠ্যবইয়ে এলজি টিভি মতবাদ নিয়ে আসার জন্য বন্ধু ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামের প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ থেকে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের ভাষ্যমতে, এনসিটিবি-র সাথে ‘টেনেশাস লবিয়িং’ করে এ বিষয়গুলো তারা ক্লাস সেভেনের সামাজিক বিজ্ঞান বইতে এনেছে।
যৌন শিক্ষা ও এলজিবিটি:
পাঠ্যপুস্তকে ট্র্যান্সজেন্ডার আনার পক্ষে ওকালতির কাজটা শুধু বন্ধু করছে না, এর সাথে আছেও অন্যান্য এনজিও এবং এলজিবিটি সংগঠন। এরা বহু বছর ধরে যৌন শিক্ষার নামে বিকৃত যৌনতার দীক্ষা পাঠ্যপুস্তকে আনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত।
ইউনিসেফসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও-দের ক্রমাগত চাপে ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো পাঠ্যপুস্তকে যৌন শিক্ষার অংশ যুক্ত করা হয়।[17] এসব অংশ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করে অভিভাবক, সাধারণ জনগণ এমনকি শিক্ষকরাও। প্রতিবাদের মুখে ২০১৪/১৫ সালে সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
কিন্তু সন্তুষ্ট হয় না পশ্চিমারা। ২০১৬ সালে সুইডেনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিডা (SIDA), আঞ্চলিক নারীবাদী এনজিও অ্যারো (ARROW), এবং দেশীয় নারীবাদী এনজিও ‘নারীপক্ষ’-এর যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যৌন শিক্ষার অবস্থা নিয়ে একটা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।[18] এতে ‘সহায়তা’ দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এ প্রতিবেদনে পাঠ্যবইগুলোর যৌন শিক্ষা অংশের বেশ কিছু দিকের সমালোচনা করা হয়েছে, যেমন
- বইগুলোতে পর্নোগ্রাফি দেখার মতো কাজগুলো সমাজের জন্য হুমকি বলা হয়েছে
- মাদ্রাসা বোর্ডের বইতে বলা হয়েছে যিনা, সমকামিতা হারাম
- বলা হয়েছে যৌনতা কেবল স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে হতে পারে[19]
লক্ষ্য করুন, এনজিও-দের বানানো প্রতিবেদনে এই অবস্থানগুলোর সমালোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ তাদের মতে যৌন শিক্ষার মাধ্যমে শিশুকিশোরদের শেখানো উচিৎ যে, পর্নোগ্রাফি সমাজের জন্য হুমকি না, যিনা এবং সমকামীতা নিষিদ্ব কিছু না, আর যৌনতা কেবল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হতে হবে এমন কোন কথা নেই। যৌন শিক্ষা কারিকুলামের ব্যাপারে সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ‘ইসলামী উগ্রবাদের’ সম্পর্ক আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে এ প্রতিবেদনের লেখিকা!
একই সুরে, ব্র্যাকের তৈরি ২০১৮-এর এক প্রতিবেদনে সমালোচনা করা হয়েছে এই কারিকুলামের।
কারিকুলামটিকে অপূর্ণ বলা হয়েছে, কারণ এতে,
- হস্তমৈথুন সংক্রান্ত আলোচনা নেই
- জেন্ডার আইন্ডিন্টিটি (ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ) সংক্রান্ত আলোচনা নেই
- বিবাহপূর্ব যৌনতা নিয়ে আলোচনা নেই
ব্র্যাকের মতে এগুলোও পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করা দরকার।[20]
তারপর ব্র্যাকের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থায় সঠিকভাবে যৌন শিক্ষা দেয়া না হলেও ১৩টি এনজিও যথাযথভাবে পশ্চিমাদের প্রেসক্রিপসান অনুযায়ী ‘যৌন এবং প্রজনন স্বাস্ত্য ও অধিকার’ (অর্থাৎ বিকৃত যৌনতার বৈধতা ও সামাজিকীকরণে) নিয়ে শিক্ষা দিচ্ছে। অর্থাৎ সমকামিতা, ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ তথা অবাধ ও বিকৃত যৌনতার শিক্ষা দিচ্ছে এই ১৩টি এনজিও। অনেকে ক্ষেত্রে এসব ‘শিক্ষা’ দেয়া হচ্ছে ইনফরমালি/অনানুষ্ঠানিকভাবে অন্য আলোচনার অংশ হিসেবে। ব্র্যাকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
অন্যান্য আনুষ্ঠান সেবা যেমন, পরিবার পরিকল্পনা, নিরাপদ জন্ম, বয়ঃসন্ধি সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সেবা, এর সাথে কম্প্রিহেনসিভ সেক্স এডুকেশন/ যৌন এবং প্রজনন স্বাস্ত্য ও অধিকার সংক্রান্ত শিক্ষা যুক্ত করে দেয়া হচ্ছে, এতে করে এসব বিষয়ের সাথে জড়িত সামাজিক নেতিবাচক মনোভাব এড়ানো সম্ভব হচ্ছে...[21]
২০২৩ সালে জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউয়ের জন্য জমা দেয়া প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের পাঠ্যপুস্তক এবং এ নিয়ে বাংলাদেশের সমাজে বিরোধিতার ব্যাপারটাও উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
২০২৩ সালের জানুয়ারীতে প্রবর্তনের পর থেকে বাংলাদেশের স্কুলগুলিতে CSE (কম্প্রিহেনসিভ যৌন শিক্ষা) পাঠ্যক্রমকে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। জাতীয় শিক্ষা ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) দ্বারা হালনাগাদ করে নতুন শিক্ষাক্রমটি চালু করা হয়েছিল জেন্ডার স্টেরিওটাইপস, যৌনতা সম্পর্কিত নেতিবাচক মনোভাব, প্রজনন, যৌনতা, যৌন আচরণ, লিঙ্গ, এবং যৌন ও লিঙ্গ বৈচিত্র্য -এর মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে কিশোরকিশোরীদের ধারণা ও বোঝাপড়া বৃদ্ধিতে সহায়তার জন্যে।[22]
অর্থাৎ ২০২৩ এর পাঠ্যবইয়ে যৌন শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে পশ্চিমা সংস্থা, এবং দেশী-বিদেশী এনজিওগুলোর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী। এ প্রতিবেদনের একটু পরেই বলা হয়েছে,
নতুন পাঠ্যপুস্তক এবং সিএসই পাঠ্যক্রম কিছু বিরোধিতা এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। যেমন, সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের "লিঙ্গ বৈচিত্র্য, লিঙ্গ পরিচয় এবং লিঙ্গ ভূমিকা" অংশের কিছু আলোচনা নিয়ে ইসলামপন্থী, রক্ষণশীল এবং সমাজের চরমপন্থী অংশগুলির দিক থেকে ব্যাপক বিরোধিতা দেখা দেয়। তারা বিশ্বাস করে যৌন শিক্ষার কিছু সেনসেটিভ বিষয়বস্তু (যেমন যৌন আনন্দ, সম্মতি, সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডার এবং ট্রানজিশন ইত্যাদি) কিশোর-কিশোরীদের চিন্তাকে কলুষিত করছে।[23]
এই প্যারাগ্রাফের বক্তব্যের দুটি দিক লক্ষ্যনীয়।
- প্রথমত, তারা স্বীকার করছে এসব আলোচনার মাধ্যমে সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডার অর্থাৎ এলজিবিটি মতবাদের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে
- দ্বিতীয়ত, এর বিরোধিতাকে তারা ইসলামপন্থা এবং চরমপন্থার সাথে যুক্ত করেছে। আপনি যদি এলজিবিটি মতবাদের বিরোধিতা করেন তাহলে আপনি চরমপন্থী!
জাতিসংঘের মাধ্যমে এলজিবিটির সামাজিকীকরণ ও আইনী বৈধতার ব্যাপারে বাংলাদেশকে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল সেগুলোর ব্যাপারে এই প্রতিবেদনের বক্তব্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ,
এলজিবিটিআই সম্প্রদায়ের অধিকার সম্পর্কিত সুপারিশের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, এবং নৈতিক বিষয়। (তবে) এসব সুপারিশ আংশিক বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বৈচিত্র্যময় যৌন রুচি এবং লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নীতি নিশ্চিত করতে সরকার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষাক্রমে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে।[24]
ওপরের কথাগুলো সহজ করে বলি।
বৈচিত্রময় যৌন রুচি = বিকৃত যৌনতা
বৈচিত্রময় লিঙ্গ পরিচয় = শারীরিকভাবে সুস্থ নারী সাজা পুরুষ বা পুরুষ সাজা নারী (ট্রান্সজেন্ডার)
যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার = বিকৃত যৌনতার বৈধতা ও সামাজিকীকরণ
অর্থাৎ আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশে এলজিবিটির বৈধতা ও সামাজিকীকরণের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে, এবং সরকারের পক্ষ থেকে আংশিকভাবে এটা বাস্তবায়ন হচ্ছে। এজন্যই শিক্ষাক্রমে যৌন শিক্ষা ও ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ নিয়ে আলোচনা যুক্ত করা হয়এছে।
এই প্রতিবেদনের শেষে আবারও দণ্ডবিধির ৩৭৭ অনুচ্ছেদ বাতিল করতে এবং এলজিবিটিকে সামাজিক ও আইনী বৈধতা দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কাজেই পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্যপুস্তকে শরীফার গল্প আর যৌন শিক্ষার আলোচনাগুলো বৈশ্বিক এলজিবিটি এজেন্ডার অংশ, এ নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
সব শেষে এই প্রতিবেদনটি তৈরিতে কারা কাজ করেছে সেটাও জানিয়ে দেই।
প্রতিবেদনের মূল উদ্যোক্তা হল অ্যারো, রাইট হেয়ার রাইট নাও এবং সেক্সুয়াল রাইটস ইনিশিয়েটিভ। তিনটাই আন্তর্জাতিক এনজিও।আর বাংলাদেশ থেকে এই প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করেছে, এবং এই প্রতিবেদনকে সমর্থন (এনডোর্স) করেছে, ব্র্যাক, নারীপক্ষ, নাগরিক উদ্যোগ, আরএইচএসটিইপি এবং অবয়ব। সবগুলো দেশী এনজিও।
সহযোগীদের তালিকায় থাকা ‘অবয়ব’ হল বয়েস অফ বাংলাদেশের নতুন নাম। বয়েস অফ বাংলাদেশ ২০১৮ সালের দিকে অবয়ব – ডাইভার্সিটি সার্কেল নামে কাজ শুরু করে।[25]
আরও মজার তথ্য হল, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকিউমেন অ্যাকাডেমি ২৩ জন বাংলাদেশী ‘চেইঞ্জমেকার’ হিসেবে মনোনীত করে। এই ২৩ জনের একজন হল তানভীর আলিম, অবয়বের অপারেশনস লীড।[26]
অ্যাকিউমেন একটি অ্যামেরিকান এনজিও। পাঠকের হয়তো মনে আছে, এই একই ব্যক্তি ২০১৩ সালে বয়েস অফ বাংলাদেশে প্রতিনিধি হিসেবে এবং বৈশ্বিক এলজিবিটি সংগঠন ইলগার পক্ষ হয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে বাংলাদেশের ব্যাপারে বক্তব্য উপস্থাপন করেছিল।
***
এভাবে পশ্চিমাদের পরিকল্পবা ও অর্থায়নে বাংলাদেশে চলছে এলজিবিটি এজেন্ডার প্রচার ও প্রসার। এমন আরও অনেকটা ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে, তার অল্প কিছু আমরা তুলে ধরছি,
- ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ নামে একটি এলজিবিটি সংগঠনের সদস্য কামাল হোসেন শিশির ওরফে তাসনুভা আনাম ইলগা নামের আন্তর্জাতিক এলজিবিটি সংগঠনের বোর্ডের সদস্য হয়েছে।[27] নিজেকে এখন ট্র্যান্সজেন্ডার নারী পরিচয় দেয়া কামাল হোসেন অতীতে কাজ করেছে সমকামী পুরষদের সংগঠন রূপবান, অবয়ব (বয়েস অফ বাংলাদেশ), এবং বন্ধু-এর সাথে।[28] বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাসের ফেইসবুকে পেইজে লেখা হয়েছে, তাসনুভাকে নিয়ে গর্বিত মার্কিন দূতাবাস।
- ঢাকা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে ট্র্যান্সজেন্ডার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র খোলা হয়েছে কেয়ার বাংলাদেশের অর্থায়নে।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ট্র্যান্সজেন্ডার কোটা চালু করা হয়েছে
- নির্বাচন কমিশনের ভোটার আইডি সংশোধন ফর্মে ‘ট্র্যান্সজেন্ডার’ শব্দ যুক্ত করা হয়েছে
- বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ফর্মে নারী ও পুরুষের সাথে ট্র্যান্সজেন্ডার ঘর যুক্ত করা হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গ ব্যবহার করা হয়নি।
- ব্র্যাকের তৈরি কমিউনিটি অর্গানাইযেইশান বিশাল বাজেট নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে ঘুরে ‘সমতা’ এর বয়ান দিচ্ছে। ইতিমধ্যে তার ব্যানারে থাকা এলজিবিটি প্রতীক এবং অন্যান্য আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।[29]
- রাইট হিয়ার, রাইট নাও নামের একটি প্রতিষ্ঠান ইয়ুথ পলিসি ফোরামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে এলজিবিটির পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে ‘যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার’ এর ব্যানারে। এ প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালে জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউয়ের জন্য প্রতিবেদন তৈরিতে অগ্রনী ভূমিকা রেখেছিল।
- ২০২৩ এর এপ্রিলে জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ১০টি সমকামী সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন পেশ করেছে বয়েস অফ বাংলাদেশ। এখানে আবারও দণ্ডবিধির ৩৭৭ অনুচ্ছেদ বাতিলের কথা বলা হয়েছে। একই সাথে যৌন বিকৃতির বিরুদ্ধে বক্তব্যকে আইন করে নিষিদ্ধ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে কোন ধরনের শারীরিক পরীক্ষা ছাড়া হিজড়া ও ট্র্যান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচয় দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।[30]
উপসংহার:
শুরু থেকে বাংলাদেশে এলজিবিটি কার্যক্রম চলছে একটি পশ্চিমা প্রকল্প হিসেবে। যেখানে এনজিও-রা পশ্চিমাদের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। এদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছে কিছু সুবিধাবাদী মধ্যস্বত্বভোগী লোকজন, কিছু পশ্চিমা দালাল, কিছু সমকামী অ্যাক্টিভিস্ট।
পশ্চিমাদের ফান্ডিং নিয়ে তাদের এনজিও-গুলো কিছু ‘গবেষণা’ করেছে। পশ্চিমাদের দেয়া অনুদানের টাকায় কিছু বিকৃতকামী লোকজন সংগঠন বানিয়ে ওয়ার্কশপ, ফ্যাশন শো টাইপের কিছু কাজ করেছে। আবার এগুলোর ছবি আর রিপোর্ট দেখিয়ে পশ্চিমারা দাবি করেছে ‘বাংলাদেশের সমকামীরা অধিকার চায়’। এটা একটা চক্রাকার প্রক্রিয়া।
সমাজের মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য একেক সময় এনজিওগুলো একেক শব্দ আর পরিভাষা ব্যবহার করেছে, কিন্তু মূল এজেন্ডা থেকেছে অপরিবর্তিত – বিকৃত যৌনতার বৈধতা ও সামাজিকীকরণ। এলজিবিটি এজেন্ডার বাস্তবায়ন। আর এলজিবিটি এজেন্ডা হল নব্য উপনিবেশবাদ। যৌন এবং আদর্শিক উপনিবেশবাদ। পুরনো উপনিবেশবাদ নিয়ন্ত্রন করতো আমাদের অর্থনীতি, ভূখণ্ড আর সম্পদকে। নতুন উপনিবেশবাদ নিয়ন্ত্রন করতে চায় আমাদের সমাজ, চিন্তা ও আচরণকে।
ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল মিশনারী অ্যাক্টিভিটি। কোন জায়গায় ঘাঁটি গাড়ার সময় কলোনিয়ালরা সাথে করে মিশনারীদের নিয়ে যেতো। খাদ্য, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে সাহায্য দেয়ার নাম করে মিশনারীরা মূলত ক্রিশ্চিয়ানিটি প্রচার করতো। উপনিবেশবাদী অফিসার আর ব্যবসায়ীদের অধিকাংশ ব্যক্তিগত জীবনে খুব একটা ধার্মিক ছিল না। কিন্তু তারা লক্ষ্য করেছিল, নেইটিভরা মিশনারীদের দাওয়াহ গ্রহণ করতে শুরু করলে তাদের নিয়ন্ত্রন করা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়।
উপনিবেশবাদ আর মিশনারীদের এই অংশীদারিত্বের সম্পর্ক আজও টিকে আছে। শুধু খ্রিষ্টান মিশনারীর বদলে এসেছে লিবারেল মিশনারী এসেছে। আজকের উপনিবেশবাদীরা তার বাপ-দাদার মতো লক্ষ্য করেছে কোন জনগোষ্ঠীর মধ্যে লিবারেল-সেক্যুলার ওয়ার্ল্ডভিউ/আকীদাহ প্রচলিত হয়ে গেলে সেই জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রন করা সহজ। আজকের উপনিবেশবাদ তাই বিশ্বজুড়ে এক বিশাল লিবারেল মিশনারী বাহিনী গড়ে তুলেছে-এনজিও, অ্যাকটিভিস্ট, কালচারাল আর ইয়ুথ আইকন ইত্যাদি দিয়ে।
বাংলাদেশেও এমন লিবারেল মিশনারীরা কাজ করছে। অনেক দিন ধরে। এদের কাজ হল পশ্চিমের আকীদাহ আর বিকৃতিকে সুন্দরভাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করা। দাসত্বকে স্বাধীনতা হিসেবে দেখানো। পশ্চিমের আকিদাহর দাওয়াহ দেয়া। দুঃখের ব্যাপার হল লিবারেল মিশনারীদের তাদের সত্যিকার নাম ও পরিচয়ে ডাকার বদলে আমাদের সমাজ তাদের আইকন বানিয়ে মাথার ওপর তুলে রেখেছে।
শত্রুপক্ষ জানে রাতারাতি জনমত বদলে ফেলা যাবে না। সেটা তাদের উদ্দেশ্যও না। তাদের উদ্দেশ্য ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সমাজের মূল্যবোধকে পাল্টে দেয়া। হঠাৎ করে বড় পরিবর্তন সমাজে উপর চাপিয়ে দিতে চাইলে সেটা ব্যাকফায়ার করার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যখন ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান মাত্রায় পরিবর্তনটা উপস্থাপন করা হয় তখন এক পর্যায়ে গিয়ে সমাজ তা মেনে নেয়। যদি এইভাবেই চলতে থাকে তাহলে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে অত্যন্ত অন্ধকার এক ভবিষ্যৎ।
আমাদের নিজেদের স্বার্থে, সমাজের স্বার্থে, দ্বীনের স্বার্থে সমাজবিধ্বংসী এই এলজিবিটি এজেন্ডার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। এখানে আপসের সুযোগ নেই, উদাসীনতা সুযোগ নেই, সুযোগ নেই নিস্ক্রিয় থাকা। প্রকৃত অর্থেই এটা আমাদের সমাজ বাচানোর প্রশ্ন, অস্তিত্ব টেকানোর প্রশ্ন।
সবাই এ বিষয়ে সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে। আমি অনুরোধ করবো, আপনারা বিষয়গুলো জানুনুন, বুঝুন এবং অন্যকে জানান। সচেতন হোন, অন্যকে সচেতন হোন। সক্রিয় হোন। যদি এ লেখাটি উপকারী মনে করেন তাহলে এটি যথাসম্ভব শেয়ার করুন। লেখার কোন তথ্যের ব্যাপারে আপত্তি বা খটকা থাকলে মূল উৎস থেকে চেক করুন।
শেষ করি পবিত্র কুরআনের কিছু আয়াত দিয়ে। আমার মনে হয়েছে এই পুরো আলোচনার শেষ কথা হল এই আয়াতগুলোঃ
وَقَالَ مُوسَىٰ رَبَّنَا إِنَّكَ آتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلَأَهُ زِينَةً وَأَمْوَالًا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّوا عَن سَبِيلِكَ ۖ رَبَّنَا اطْمِسْ عَلَىٰ أَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوا حَتَّىٰ يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ
মূসা বললেন, ‘হে আমাদের রব! আপনি তো ফির’আউন ও তার পরিষদবর্গকে দুনিয়ার জীবনে শোভা ও সম্পদ দান করেছেন, হে আমাদের রব! যা দ্বারা তারা মানুষকে আপনার পথ থেকে বিচ্যুত করছে। হে আমাদের রব! তাদের সম্পদ বিনষ্ট করুন, আর তাদের হৃদয় কঠিন করে দিন, যাতে তারা ঈমান আনতে না পারে ঐ পর্যন্ত যতক্ষণ তারা যন্ত্রণাদায়ক আযাবকে প্রত্যক্ষ করে।’
قَالَ قَدْ أُجِيبَت دَّعْوَتُكُمَا فَاسْتَقِيمَا وَلَا تَتَّبِعَانِّ سَبِيلَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ
আল্লাহ তা‘আলা জবাব দিলেন, ‘আপনাদের দুজনের দো’আ কবূল হল, কাজেই আপনারা দৃঢ় থাকুন এবং তাদের পথ অনুসরণ করনা যাদের জ্ঞান নেই।
[1] ট্রান্সজেন্ডারদের সুরক্ষায় হচ্ছে আইন, নিউজবাংলা ২৪, মার্চ ১০, ২০২২
https://www.newsbangla24.com/news/182775/The-law-is-to-protect-transgender-people
[2] দৈনিক ইত্তেফাক, সম্পত্তিতে অধিকার পাবেন ট্রান্সজেন্ডার সন্তানরা: খসড়া চূড়ান্ত, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই সুরক্ষা আইন, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩
https://www.ittefaq.com.bd/669275/সম্পত্তিতে-অধিকার-পাবে-ট্রান্স-জেন্ডার-সন্তানরা
[3] CNN, Fact Check: DeSantis dings Biden for pro-LGBT aid to Bangladesh that began under Trump, 2023
https://edition.cnn.com/2024/01/12/politics/fact-check-ron-desantis-aid-to-bangladesh/index.html
[4] 5 Ways USAID Promotes LGBTQI+ Inclusion Around the World,
https://medium.com/usaid-2030/5-ways-usaid-promotes-lgbtqi-inclusion-around-the-world-dd665506c7ab
[5] Fact Check: DeSantis dings Biden for pro-LGBT aid to Bangladesh that began under Trump
https://edition.cnn.com/2024/01/12/politics/fact-check-ron-desantis-aid-to-bangladesh/index.html
https://pdf.usaid.gov/pdf_docs/PA00XRQS.pdf
New Age, SHOMOTA project for gender diverse populations launched, 2023,
https://www.newagebd.net/article/202998/shomota-project-for-gender-diverse-populations-launched
[6] Bandhu Annual Report 2022, Note from Chairperson and Executive Director, p- 6
[7] Bandhu Annual Report 2021, p 32
[8] ট্রান্সজেন্ডারদের সুরক্ষায় হচ্ছে আইন, নিউজবাংলা ২৪, মার্চ ১০, ২০২২
[9] ট্র্যান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় আইন দ্রুত পাশ হবে, সাম্প্রতিক দেশকাল, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
[10] দৈনিক ইত্তেফাক, সম্পত্তিতে অধিকার পাবেন ট্রান্সজেন্ডার সন্তানরা: খসড়া চূড়ান্ত, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই সুরক্ষা আইন, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩
https://www.ittefaq.com.bd/669275/সম্পত্তিতে-অধিকার-পাবে-ট্রান্স-জেন্ডার-সন্তানরা
[11] বইয়ের লিংক
[12] বইয়ের লিংক বা স্ক্রিনশট
[13] Bandhu Annual Report 2021, p 28
[14] Ibid
[15] Bandhu Annual Report 2022, p 7
[16] Ibid, p 9
[17] Sabina, Nazme. Religious Extremism and Comprehensive Sexual and Reproductive Health and Rights in Secondary and High Secondary Education in Bangladesh: Building New Constituencies for Women's Sexual and Reproductive Health and Rights (SRHR): Interlinkages Between Religion and SRHR. Naripokkho, 2016.
[18] SIDA: The Swedish International Development Cooperation Agency, সুইডেনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, https://www.sida.se/en
ARROW: Asian-Pacific Resource and Research Centre for Women, আঞ্চলিক নারীবাদি এনজিও, https://arrow.org.my
[19] Sabina 2016, Religious Extremism
[20] Islam, Kuhel Faizul, Gazi Sakir Mohammad Pritom, and Nadia Farnaz. "A Review Report On Comprehensive Sexuality Education In Bangladesh." (2018). p 16
[21] Ibid, p 18
[22] Universal Periodic Review of Bangladesh, 44th Session, November 2023. Report submitted by: The Asian Pacific Resource & Research Centre for Women (ARROW). On behalf of Right Here Right Now and the Sexual Rights Initiative, p 4
PDF: https://www.upr-info.org/sites/default/files/country-document/2023-11/JS8_UPR44_BGD_E_Main.pdf
[23] Ibid
[24] Ibid, p 12, 13
[25] Hossain, Adnan. "Section 377, same-sex sexualities and the struggle for sexual rights in Bangladesh." Austl. J. Asian L. 20 (2019): 115.
“To adhere to our value of inclusiveness and since BoB is now widely known as an LGBTQ rights organisation, we felt the need to change the name to reflect this and it shall soon be called Oboyob which means shape, or outline”.
LSE Blogs, “All we want to do is fit in. To be accepted. To be part of the group”: Discussing LGBTQ rights in Bangladesh, 2018.
PDF link: https://eprints.lse.ac.uk/91042/1/Bowers_All-we-want-to-do_Author.pdf
[26] Dhaka Tribune, 23 Bangladeshi changemakers selected for prestigious Acumen Fellowship Program, 2020
https://www.dhakatribune.com/feature/198316/23-bangladeshi-changemakers-selected-for
https://www.thedailystar.net/city/23-get-acumen-fellowship-1852147
[27] যুক্তরাষ্ট্রের ইলগা ওয়ার্ল্ডের বোর্ড সদস্য হলেন বাংলাদেশি তাসনুভা আনান, দৈনিক যুগান্তর, ১৪ জুন ২০২২
https://www.jugantor.com/exile/562342/যুক্তরাষ্ট্রের-ইলগা-ওয়ার্ল্ডের-বোর্ড-সদস্য-হলেন-বাংলাদেশি-তাসনুভা-আনান
https://www.facebook.com/inclusivebangla/videos/1719156641815658/
[28] Daily Observer, First transgender woman to appear as news presenter on TV channel tomorrow, 2021, https://www.observerbd.com/news.php?id=302320
[29] ব্র্যাকের ‘সমতন্ত্র’ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে: বেরোবি ভিসি
https://thedailycampus.com/public-university/128806/ব্র্যাকের-সমতন্ত্র-নিয়ে-নতুন-করে-বিতর্ক-সৃষ্টি-হতে-পারে-বেরোবি-ভিসি
ব্র্যাকের সমতন্ত্রের পোস্টারে এলজিবিটির প্রতীক, সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ শিক্ষার্থীদের
[30] Universal Periodic Review of Bangladesh 44th Session, April 2023. Report submitted by: Boys of Bangladesh (BoB)
https://www.upr-info.org/sites/default/files/country-document/2023-11/BoB_UPR44_BGD_E_Main.pdf